করোনা আবহে পুজোর আনন্দে খামতি না থাকলেও, ভাঁটা পড়েছে মৃৎশিল্পীদের কারিগরিতে –


সংবাদ ভাস্কর নিউজ ডেস্ক : সম্প্রতি বিশ্ব তথা দেশ ব্যাপি করোনা ভাইরাস এর আক্রমণে জেরবার সাধারণ মানুষ। যার প্রতিফলন এসে পরেছে দেশের অর্থনীতিতে, ফলে ভেঙে পড়েছে অর্থনৈতিক পরিকাঠামো। কিন্তু এত কিছুর পরেও এই করোনা আবহে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজার আনন্দ-আমেজে কোনো খামতি নেই রাজ্যের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার মনে। তবে অর্থনৈতিক পরিকাঠামো ধ্বসে যাওয়ায় কলকাতার বড় বাজেটের পুজোগুলির মধ্যে কিছু পূজা বন্ধ রাখা হয়েছে।
আর কিছু বেশকিছু বড় বাজেটের পূজাকে ছোট বা সীমিত বাজেটের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। ফলে তার জের এসে অনেকটাই বিধ্বস্ত করেছে বাঙালার কুমোরটুলিকে। মূলত উৎসব আমেজেই নানা ধরনের মাটির মূর্তি গড়ে পেট চলে মৃৎশিল্পীদের। আর বিশেষ করে এই শরৎকালীন শারদীয়া উপলক্ষে বড়-ছোট বাজেটের বহু দূর্গা প্রতিমার বায়না তাদের সারা বছরের রুজিরুটির উৎসস্থল।
কিন্তু এই করোনা আবহে মৃৎশিল্পীদের সেই রুজিরুটিতে পড়েছে ভাঁটার টান। উত্তর ২৪ পরগণা জেলার অন্তর্গত গোরাবাজার কুমোরটুলি পাড়ায় এবারে নেই মৃৎশিল্পীদের সেই আড়ম্বরপূর্ণ কারিগরি। নিউ অজন্তা স্টুডিও নামক কুমোরটুলির মালিক তথা শিল্পী বিল্লরঞ্জন পাল আমাদের সংবাদমাধ্যমকে জানালেন যে, এবারে সব ছোট বাজেটের পুজোর বায়না এসেছে বেশি। প্রায় ৭-৮ ফুট উচ্চতার প্রতিমা, যার নূন্যতম মূল্য ২০ হাজার টাকা। বড় বাজেটের পুজো নেই বললেই চলে, যাও বা এসেছে তারা সেই ২০-২৫ হাজারের মধ্যেই একটু বৃহৎ প্রতিমার বায়না করে যাচ্ছে।
বড় জোর ৪০ হাজারের মতো এক দুটো বায়না হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি আরও ভালো যে, প্রতি বছর বিদেশ মানে আমেরিকা, ফ্রান্সে আমাদের কুমোরটুলি থেকে বহু দূর্গা প্রতিমা রপ্তানি করা হয়। কিন্তু এবছর বিদেশ থেকেও কোন ছোট-বড় প্রতিমার বায়না আসেনি। তবে ইতিমধ্যেই বায়না এসেছে দমদম, সাতগাছি, বাঙুর, লেকটাউন, নিউটাউন, রাজারহাট, দমদম পার্ক, বাগুইআটি, এয়ারপোর্ট, প্রভৃতি এলাকার পুজা কমিটিগুলি থেকে। সর্বমোট বায়না হয়েছে ৪০টি। আর মোটামুটি ৬০টি প্রতিমার কাঠামো প্রস্তুত করে রাখা আছে, ভবিষ্যতে যদি আরও কিছু বায়না আসে তার জন্য। কুমোরটুলির আরেক শিল্পী প্রশান্ত ঘোষ বললেন, প্রতি বছর দুর্গাপূজার সময় কমপক্ষে ২ থেকে ৩ লাখ টাকার বায়না আসে একেকটা পুজো কমিটির পক্ষ থেকে।
কিন্তু এই বছর করোনা মোকাবিলায় লকডাউনের জেরে অর্থনৈতিক চাপের ফলে সেই সব বাজেটের পুজোগুলি এখন ৬০ থেকে ৪০ হাজারের মধ্যে প্রতিমা বায়না করেছে। ফলে কারিগরি শিল্পীদের লাভ বা ইনকাম অনেকাংশে কমে গেছে। লকডাউন চলাকালীন একটা সময় মনে হয়েছিল যে এবছর আর ব্যবসাই হবে না। ছেলে-পুলে নিয়ে বোধহয় না খেয়েই মরতে হবে। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে, অন্তত কম বাজেটের পুজোগুলির দরুন এবারে না খেয়ে মরতে হবে না আমাদের। তবে এবছর খুব বেশি আয় ইনকাম নেই। এমনকি বিদেশ থেকে যে সমস্ত পুজোর বায়না আসত, এ বছর তাও আসেনি। তবে মাঝারি-ছোট বাজেট মিলিয়ে ৭০টি বায়না হয়েছে এখনো অব্দি। সব মিলিয়ে এক অর্থনৈতিক বিধ্বস্তপ্রায় চিত্র ফুটে উঠেছে গোরাবাজারের কুমোরটুলি পাড়ায়। সারাদিন প্রায় মাছি তাড়ানোর মত অবস্থা। নেই সেভাবে ক্রেতাদের আনাগোনা। এখানে ওখানে শুয়ে বসে দিন কাটছে কারিগরদের। যদিও শিল্পী ও কারিগররা জানান যে, তারা সরকারি স্বাস্থ্য বিধি মেনেই, সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে, মাস্ক পরিধান করে এবং স্যানিটাইজেশনের মাধ্যমেই সমস্ত ক্রেতাদের সাথে বায়না ডিল করছেন।