নিজস্ব প্রতিবেদন, বীরভূম: প্রত্যেক বারের মতো এবারেও বাউলের সুর তাল ও ছন্দে একত্রিত হয়ে জমে উঠেছে অজয় নদীর তীরে অবস্থিত কেন্দ্রের জয়দেব মেলা। পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো মানুষ এই মেলায় প্রত্যেকবার যোগদান করেন। আট থেকে আশি বয়সের কোনো ভেদাভেদ না রেখেই প্রত্যেকটি শরণার্থী দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পৌষ মাসের কেন্দুলী গ্রামের এই জয়দেব মেলায় উপস্থিত হন। লোকমুখে এই জয়দেব কে নিয়ে বহু কাহিনী প্রচলিত আছে। কেন্দুলী থেকে অর্থাৎ বর্তমানে যেখানে জয়দেব মেলা হয় সেখান থেকে ইচ্ছায় ঘোষের মা শ্যামা মন্দিরের দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। শোনা যায় ইতিহাসের মৃত্যুর পর মন্দির প্রাঙ্গনের হাড়িকাঠে কাপালিকরা নরবলি দিত। সাধক কবি জয়দেব একবার সেখানে গিয়েছিলেন ও কাপালিকে প্রশ্ন করেছিলেন আপনি নরবলি কেন দেন। কাপালিক জয়দেবের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বলেছিলেন মা খুশি হন তাই এই প্রক্রিয়া চলে। কাপালিকের উত্তরে জয়দেব বলেন মাঝে খুশি হয় তা আপনি জানলেন কি করে! কাপালিক উত্তর দেন মায়ের সাথে তার দেখা হয়, জয়দেব তখন বলেন আমাকেও একবার মায়ের সাথে দেখা করিয়ে দিন। কাপালিক রাজি হলে জয়দেব বলেন যদি আমাকে আপনি মায়ের দর্শন করিয়ে দিতে পারেন তবে আমি আপনাকে কৃষ্ণ দর্শন করাবো। কিন্তু একটাই শর্ত যে নরবলি বন্ধ করতে হবে। কাপালিক রাজি হয়ে যায় জয়দেবের এই কথায়। কিন্তু কাপালিক এই কাজে ব্যর্থ হয়। জয়দেবের পূজায় দুষ্ট হয়ে ভগবতী শ্যামা মা শ্যাম রূপে দর্শন দেন। শ্যাম রূপে মায়ের দর্শন পেয়ে কাপালিক জয়দেবের পায়ে লুটিয়ে পড়ে। ঠিক তখন থেকেই গড় জঙ্গলের শ্যামা রুপার মন্দিরে নরবলি বন্ধ হয়।

এই কারণেই গড় জঙ্গলের এই মন্দিরের নামকরণ করা হয় শ্যামা রুপমন্দির।

পশ্চিম বর্ধমান এ বীরভূমের সংলগ্ন অজয় নদীর তীরে এই জয়দেবের মেলাতে প্রত্যেক বছর অগণিত মানুষের ঢল দেখতে পাওয়া যায় এই জয়দেবের মন্দিরে পূজা দেওয়ার জন্য।পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ তথা ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ এই মন্দিরের আসেন পূজার উদ্দেশ্যে। একই সাথে অজয় নদীতে মকর সংক্রান্তির স্নান করে থাকে অজস্র সাধারণ মানুষ।এই মেলা সাধারণত তিন দিনের হয়ে থাকে মেলা শুরুর প্রথম দিন থেকেই বিপুলসংখ্যক মানুষ এখানে এসে উপস্থিত হয়।যার ফলস্বরূপ স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঠিক যতটা সম্ভব সচেতনতা অবলম্বন করা প্রয়োজন নেহাতই সেই তুলনায় স্থানীয় প্রশাসন তৎপর নয়।অত্যধিক ভিড়ের দরুন অজয় নদীর মাঝখান দিয়ে যে অস্থায়ী সেতু তৈরি করা হয় সেই অস্থায়ী সেতু এই বিপুলসংখ্যক জনগণের পারাবারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট উপযুক্ত একেবারেই নয়।যার ফলে কিছু-না-কিছু দুর্ঘটনা প্রত্যেকবারই পরিলক্ষিত হয়।প্রশাসনের তরফ থেকে অনেকগুলো ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করা হয়েছে কিন্তু জনগণের সুরক্ষা ব্যবস্থা কতটা উন্নত হয়েছে সেই ব্যাপারে এখনো জিজ্ঞাসা চিহ্ন থেকে যায়।