নিজস্ব প্রতিনিধি– সাংবাদিকরা কি ভিক্ষার পাত্র? যে তাদের ডালাতে যা হোক কিছু ছুঁড়ে দিলেই সেটা সাদরে গৃহীত হবে।এমনই প্রশ্নের জন্ম দিয়ে গেল দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলা প্রশাসন।
ঘটনা হল বর্তমান করোনা ভাইরাসের সংক্রামণের কারণে প্রতিটি মানুষ যখন ঘরবন্দি বলা যায়,যেখানে বিভিন্ন পেশার অসংগঠিত ক্ষেত্রের মানুষেরা এখন এই লক ডাউনের কারণে প্রচন্ড সমস্যায় পড়েছেন,যাদের সবারই প্রায় রোজগার পাতি বন্ধ।ফলে বাড়ির হেঁসেল প্রায় শিঁকে ওঠার যোগার।এমন অবস্হায় সব চেয়ে বেশি অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে রাজ্যের ক্ষুদ্র পাক্ষিক ও সপ্তাহিক কাগজগুলোর সাংবাদিকদের।লক ডাউনের কারণে এখন বহু কাগজই তাদের প্রকাশনার কাজ ঠিকমত করতে পারছেন না।আবার অনেকে তাদের প্রকাশনা বাধ্য হয়ে সাময়িক স্থগিত রেখেছেন।এরকম পরিস্থিতিতে ছোট পত্র পত্রিকার সাংবাদিকদের জন্য সরকারি পর্যায়ে কিছু অনুদানের জন্য আবেদন জানানো হচ্ছিল বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের পক্ষ থেকে। যেখানে কোনো কোনো সাংবাদিক সংগঠন তো সরকারের কাছে ছোট পত্রিকাগুলোর সাংবাদিকদের জন্য আর্থিক প্যাকেজেরও দাবি জানিয়ে আসছিল। যারই কারণে লক ডাউনের বাস্তবতাকে মাথায় রেখে দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুঃস্থ অসহায় সাংবাদিকদের জন্য চাল ডাল আলু ইত্যাদি নিত্য খাদ্যসামগ্রী বন্টন করা শুরু করে গত মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে।
প্রথম দিকে দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিভিন্ন ব্লকে ব্লকে বিডিও দের মাধ্যমে এই বন্টন ব্যবস্থা চালু করা হয়, যাতে একেকজনকে মাথাপিছু ২৫ কেজি চাল কেজি দুয়েক ডাল দেওয়া হয়।কিন্তু পরবর্তি সময় এই পরিমাণটাই কমে হয়ে যায় মাত্র পাঁচ কেজি।তাও আবার এই সামগ্রী এমন সব সাংবাদিকদের মধ্যে বন্টন করা হয় আদৌ যাদের কোনো প্রেস কার্ডই নেই। তারা কোন হাউজে যুক্ত সেটা প্রশাসন তো ছাড় জেলার বেশিরভাগ সরকার অনুমোদিত সাংবাদিকরাই জানেন না। যা নিয়ে এখন রীতিমত দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলা সাংবাদিক মহলে উঠেছে প্রশ্নের ঝড়।দেখা যাচ্ছে সরকার অনুমোদিত সাংবাদিকরা এই অনুদান থেকে বঞ্চিত হলেও এই জেলার অ-অনুমোদিত নাম না জানা সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিকরা বরাদ্দ খাদ্যসামগ্রী পেয়ে গেছে। যারই পিছনে স্বজন পোষন ও দুর্ণীতির মারাত্মক ইঙ্গিত দিচ্ছেন কেউ কেউ। এনিয়ে এই জেলার বর্ষিয়ান সাংবাদিক দুর্বার কলমের অমর নস্করের বক্তব্য,” আমাকে ব-দ্বীপ বার্তার সাজাহান সিরাজরা যেভাবে নামের লিষ্ট তৈরি করতে বলেছিলেন আমি সেই ভাবেই করেছি।” যেখানে জেলার সুপার হিট পত্রিকার সাংবাদিক দিলওয়ার হোসেনের বক্তব্য, তিনি বিডিও অফিস থেকে ২৫ কেজি চাল ডাল পেয়েছেন । ওই জেলার বেহালা থেকে প্রকাশিত সাংবাদিক দেবাশিস ভট্যাচার্যের বক্তব্য তাকে মাত্র চার কেজির মত চাল আর একটু ডাল দেওয়া হয়েছে।যেটা নিতে গিয়ে তিনি যথেষ্টই অসম্মান বোধ করেছেন। আরো অবাক করা বিষয় হল সরকারি এই অনুদান সবটাই নাকি মৌখিক ভাবে হয়ে চলেছে যেখানে প্রাপকের সাক্ষরের দরকারই নেই এমনটাই শোনাচ্ছেন কর্তারা।
ফলে সাংবাদিকদের নাম ভাঙিয়ে কে কিভাবে সরকারি মালের ভাগ পাচ্ছেন তাই নিয়ে উঠছে প্রশ্ন, যা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করলেন গড়িয়ার বোড়ালের বরিষ্ঠ স্থানীয় একটি পাক্ষিক পত্রিকার সাংবাদিক কৃষনেন্দু দত্ত।তার অভিযোগ পুরো প্রক্রিয়াটাই হয়েছে কয়েকজনের অঙ্গুলি হেলনে যার বিন্দুবিসর্গ তাদের জানানো হয়নি। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই যে প্রশ্নটা উঠতে বাধ্য তাহল সরকারি কোনো অনুদান এভাবে যথেচ্ছ বিলি বন্টনের মানে কি ?এব্যাপারে এই জেলার অনুমোদিত সরকার সাংবাদিক শুভাশিস ঘোষের মতে দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলা প্রশাসন একটু সক্রিয়তা দেখাতে পারলেই এই কাজে স্বচ্ছতা রক্ষা করা সহজ হতো। তার মতে প্রতিটি অনুমোদিত সংবাদ পত্র ও তাদের সাংবাদিকদের নাম ঠিকানা তো জেলার তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরেই জমা আছে। সেখান থেকে প্রাপকদের নামে নামে ওই খাদ্যসামগ্রী থানা বা বিডিওদের মাধ্যমে দেওয়া হলে আজ কোনো প্রশ্নই উঠতো না। যেখানে আদৌ সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত নন এমন বহু মানুষও সরকারি এই চাল ডাল হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে।