সংবাদ ভাস্কর ডিজিটাল ডেস্ক : সুশান্ত এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তাঁর কাছে সাফল্যের অর্থ রোজগার এবং পরিচিতির যোগফল নয়। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে সুশান্ত টাকাপয়সার টানাটানি দেখেছেন, জীবনে প্রচুর অর্থ রোজগারও করেছেন। শৈশব থেকেই সুশান্ত খুব অন্তর্মুখী ছিলেন।
নিজেকে প্রকাশ করার জন্যই অভিনয়কে বেছে নেন, যাতে চরিত্রের আড়ালে তিনিও একটা নতুন জীবন খুঁজে পান। দর্শকদের ভালবাসায় পরিচিতিও পেয়েছেন। কিন্তু তাকেই সাফল্য বলতে নারাজ ছিলেন সুশান্ত। উত্তর-পূর্বের বন্যার্তদের পাশে থাকা, গরিব ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় সাহায্য, সাধারণ মেধাবীদের NASAয় পৌঁছে দেওয়া, সাফল্য বলতে বোধহয় এগুলোকেই বুঝতেন সুশান্ত, নাকি আরও অন্য কিছু? উত্তরটা অধরাই রয়ে গেল………..
জুন ১৪, ২০২০… এই সেই কলুষিত তারিখ যেদিন এই পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছেন সুশান্ত সিং রাজপুত। সুশান্তের মৃত্যু শুধু বলি ইন্ডাস্ট্রিকেই নয়, সারা দেশকে রীতিমতো নাড়িয়ে দিয়েছিল। অভিনেতা তার দুর্দান্ত অভিনয় এবং প্রাণবন্ততা দিয়ে প্রতিটি অনুরাগীর হৃদয় জয় করেছিলেন।
তবেএত শীঘ্রই নিজের জীবনের প্রতি হতাশ হয়ে চিরতরে চোখ বন্ধ করে দেবেন তা কল্পনাতীত ছিল। সুশান্ত সিং রাজপুতকে মুম্বইতে তার অ্যাপার্টমেন্টে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যাওয়ার আজ দুই বছর পরও সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি অভিনেতা আত্মহত্যা করেছেন নাকি তাঁর মৃত্যুর ষড়যন্ত্র ছিল।
২০২০ সালের আগস্টে এজেন্সি তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ২২ মাসে একাধিক সাক্ষীকে একাধিকবার জেরা করেছে, অভিনেতার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলির বিশদ বিশ্লেষণ এবং মৃত্যুর আগে তার মানসিক অবস্থার মূল্যায়ন করেছে। ষড়যন্ত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে মৃত্যুকে দেখার জন্য মামলাটি সিবিআই-এর কাছে স্থানান্তর করা হয়েছিল। কিন্তু তা কতদূর?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেছেন, তদন্তকারী দল সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সমস্ত প্রমাণ সাবধানতার সঙ্গে দেখতে চায় বলেই এত দীর্ঘ সময় পরেও তদন্ত শেষ হয়নি। যদিও অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সের একটি মেডিকেল বোর্ড ২০২০র সেপ্টেম্বরে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল যে অভিনেতার মৃত্যু আত্মহত্যা।
অন্যদিকে সিবিআই বলেছে, “তদন্তের সময় আধুনিক সফ্টওয়্যার সহ উন্নত মোবাইল ফরেনসিক সরঞ্জাম ডিজিটাল ডিভাইসগুলিতে উপলব্ধ প্রাসঙ্গিক ডেটা বের করা এবং বিশ্লেষণের জন্য এবং মামলা সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক সেল টাওয়ারের ডেটা বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে”। .তদন্তকারীরা আলিগড়, ফরিদাবাদ, হায়দ্রাবাদ, মুম্বাই, মানেসার এবং পাটনা সহ বিভিন্ন শহর গিয়েছে প্রমাণ সংগ্রহ করতে এবং বিবৃতি রেকর্ড করতে। গত ১০ মাসে যাদের পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন সুশান্তের বন্ধু, কর্মী, তার ডাক্তার, রিয়া চক্রবর্তী এবং তার পরিবারের সদস্যরা এবং সিনেমা জগতের বেশ কয়েকজন সদস্যরা।
তবে সুশান্তের মৃত্যুদিনকে তাঁর ফ্যানেরা ঘোষণা করেছে Anti Nepotism Day হিসাবে।
কারণ অধিকাংশের বিশ্বাস, বলিউডের পরিচিত বৃত্তের বাইরে থেকে এসে মেইনস্ট্রিম হিরো হওয়াটা অনেকেই ভালো চোখে দেখতে পারেন নি। বিশেষত, ‘ধোনি’ ছবিতে তাঁর অসাধারণ অভিনয় দেশের বিখ্যাত একটাও অ্যাওয়ার্ড না এনে দেওয়ায় আরও হতাশ অনুরাগীকুল। তাই তাঁদের বিশ্বাস, খানিকটা হতাশায় ভুগতেন সুশান্ত। যদিও সেটাই তাঁর মৃত্যুর কারণ কিনা, সেটা অবশ্য এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। হ্যাঁ, দু বছর পরেও পরিবারের কাছে কোনও ‘ক্লোজার’ নেই।